Sunday, August 16, 2020

"আন্তর্জাতিক ডিজাইন প্রতিযোগিতায় চুয়েট শিক্ষার্থীদের সাফল্য"

  

 মাহজেরীন সুলতানা (ব্যাচ-১৩)
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় - চুয়েট এর স্থাপত্য বিভাগের একটি দল ভারতে অনুষ্ঠিত ‘সুন্দর বাড়ি’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক ডিজাইন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার-আপ হয়েছে। প্রতিযোগিতায় চুয়েট শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত প্রজেক্টের নাম ছিলো ‘শেল-টার’। বিজয়ী দলের সদস্যরা হলেন- অনিরুদ্ধ দে নিলয় (ব্যাচ '১৪), মাহজেরীন সুলতানা ঐশী (ব্যাচ '১৩) ও আবুল হাসান সিকদার রাহাত (ব্যাচ '১৩)।

শনিবার প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল অনলাইনে ঘোষণা করা হয়। ভারতের বিশ্বব্যাপি স্থাপত্য, পরিকল্পনা, ডিজাইন ও নগর অধ্যয়ন বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘সার্চ ফর ট্রাস্ট’ উক্ত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে ২৯৭ টি দলের সমন্বয়ে প্রায় ৮৫০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।

মে, ২০২০ এ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তছনছ হয়ে যায় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকাগুলো। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলাসহ ভারতের সুন্দরবন উপকূলীয় বেশকিছু এলাকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এতে। আম্ফানের তান্ডবে বিদ্ধস্ত হয়েছিল গোটা সুন্দরবন উপকূল। তার উপরে দারিদ্রতা তো আছেই।

অনিরুদ্ধ দে নিলয় (ব্যাচ-১৪)
 

এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষের দুর্ভোগে সাড়া দিতে ভারতের "Trust for SEARCH" প্রতিষ্ঠানটি "সুন্দর-বাড়ি" শিরোনামে স্থাপত্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করেছিল যেখানে সুন্দরবনের একটি পরিবারের জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী গ্রুপকে একটি ভিটেবাড়ির বিকল্প ধারণা উপস্থাপন করা এবং যেটা একই সাথে স্থিতিস্থাপক, টেকসই, সৃজনশীল, সাশ্রয়ী ও বাস্তবায়নযোগ্য হওয়াটা ছিল মূল উদ্দেশ্য।

চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের একটি দল এই প্রতিযোগীতায় "Shell-ter" (শেল-টার) শিরোনামে একটি ধারনা উপস্থাপন করেছিল। সুন্দরবনের এই দুর্যোগ কবলিত মানুষগুলোর জন্য স্থায়ী সুরক্ষা দরকার যাকে তারা বলছে শেল/shell, দুর্যোগ সময়ে যেখানে তারা নিশ্চিন্তে মাথা গুঁজতে পারবে। বর্গক্ষেত্রাকার আকৃতির বাড়ি ও পিরামিড আকৃতির চাল বাড়িকে করে তুলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব চেয়ে স্থায়ী। আবার জাল বুনা বা ফসল গোলাজাতকরণ- এধরণের কাজের জন্য দুই দিকে বেশ অনেকটা আধা-বহিরঙ্গন জায়গা রাখা হয়েছে যার মেঝে ও বেড়া বাশের মডিউলে তৈরি যা প্রয়োজনে খুলে ফেলা বা নষ্ট হলে খুব সহজে মেরামত করা সম্ভব। বাড়ির দুইদিকের দেয়ালগুলি খুলে এই আধা-বহিরাঙ্গনের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আবার পুরো বাড়িটিই মাচার উপরে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনে পানি উঠলেও সমস্যায় পড়তে না হয়, আর মাচার নিচের জায়গাগুলা গবাদি পশুপালনের জন্য ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা, ঘূর্নিঝড়ের সময়ে গবাদি পশু বাড়ির ভিতরে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা সহ অনেক দিক খেয়াল রেখে ডিজাইনটি করা হয়েছে। ডিজাইনটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নযোগ্য এবং সুন্দরবনে এই ডিজাইনে বাড়ি তৈরি হলে উপকৃত হবে সুন্দরবনের সাধারণ গরীব মানুষ - এই আশা ব্যক্ত করেছে দলের সদস্যরা।

আবুল হাসান সিকদার (ব্যাচ-১৩)
 

১৫ আগষ্ট অনলাইনে এই প্রতিযোগীতার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এবং এই দলাটি দ্বিতীয় রানার আপ অবস্থান লাভ করে।

চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম বিজয়ী দলের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের এই সফলতা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের আহবান জানান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিক্ষার্থীদের এমন সাফল্যে চুয়েট পরিবার গর্বিত

No comments:

Post a Comment