হাসিবুল আলাম হৃদয়”(ব্যাচ’১৭) |
উপকুল অঞ্চল গুলোতে যেমন সুন্দরবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্যনৈমত্যিক বিষয়। প্রতিবছর দুর্যোগ মৌসুমে বন্যা ঝড়
সাইক্লোনে উপকুলীয় অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হয়।বছর ঘুরে তা পুষিয়ে ও নেয় সেখানকার আদিবাসী রা।
যুগের পর যুগ ধরে এই লুপ টা চলে আসছে।মানুষ তার অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞ্যান দিয়ে সেখানে টিকে আছে।
কিন্তু বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং(বৈশ্বিক উষতা) র জন্য ক্লাইমেটিক সাইকেল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর বন ও এই
বৈশ্বিক বিপর্যয়ের স্বিকার। বিগত কয়েক বছরেই বেশ কিছু সাইক্লোন জলোচ্ছাসে প্রায় পর্যুদস্ত সে এলাকার লোকজন।
চলতি বছরে মে মাসের ১৬ তারিখ সেরকম ই এক বিপর্যয় AMPHAN আঘাত হানে সুন্দরবন উপকুলীয় এলাকায়।
এতে বাংলাদেশ এবং ভারত এর উপকুলীয় অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমুল্যের
সম্পদ ধ্বংষ সহ প্রান হারায় ১১৮ জন(সরকারী হিসাব) মানুষ সহ অসংখ্য গবাদী পশু।
এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষের দুর্ভোগে সাড়া দিতে ভারতের "Trust for SEARCH" প্রতিষ্ঠানটি "সুন্দর-বাড়ি" শিরোনামে স্থাপত্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করেছিল যেখানে সুন্দরবনের
একটি পরিবারের জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী গ্রুপকে একটি ভিটেবাড়ির বিকল্প ধারণা উপস্থাপন করা এবং যেটা
একই সাথে স্থিতিস্থাপক, টেকসই, সৃজনশীল, সাশ্রয়ী ও বাস্তবায়নযোগ্য হওয়াটা ছিল মূল উদ্দেশ্য।
WAVE WITH THE WIND (Adaption with the ecological relationship) শিরোনামে প্রজেক্ট টা শুরু করা হয়।
যার মুল লক্ষ ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সম্পুর্ন ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে দুর্যোগে টিকে থেকে দুর্যোগের
সময় মানুষ গবাদী পশু সেফ করা এবং দুর্যোগ পরবর্তি সময়ে খাদ্য এবং খাবার পানি ক্রাইসিসের মোকাবেলা করা ।
স্ট্রাকচার বিল্ডিং মেটারিয়াল হিসেবে নেয়া হয়ে হয়েছে সুন্দরবনের স্থানীয় প্রোডাক্ট যেমন বাশ,গোলপাতা গরান কাঠ ।
সাইক্লোন,বন্যা,জলোচ্ছাস পানির স্রোত এবং পানির লবনাক্ততা নিরসনের জন্য টোটাল স্ট্রাকচার কে তিনভাগে
ভাগ করা হয়।প ১।লাইভ সেভার মডিউল ২।স্টোরেজ মডিউল৩।ওয়াটার সাপ্লাই এবং পয়নিষ্কাষন ইউনিট ।
টোটাল স্ট্রাকচারের সার্ভিস টাইম কে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। দুর্যোগ পুর্ব মুহুর্ত,দুর্যোগ মুহুর্ত এং দুর্যোগ
পরবর্তী মুহুর্ত
মডিউল ০১ দুই ভাগে বিভক্ত।প্রথম অংশ দক্ষিন পশ্চিম পার্শের দোকান ঘর এবং দ্বিতীয় অংশ উত্তরপশ্চিম পাশের
থাকার ঘর(Living Space). দুই অংশের মধ্যবর্তি অংশে থাকবে ১৬ স্কয়ার মিটারের একটা ছোট খোলা জায়গা যেখানে
রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্ল্যান্ট ইন্সটল থাকবে।যা বন্যা কিংবা বর্ষা মৌসুমে একটি পরিবারকে খাবার পানি সরবরাহ
করবে তাছাড়াও সুপেয় পানি জমা করার ও ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। ।মডিউল০১ এর প্লিন্থ লেভেল ৫ ফিট (১.৫ মিটার) ।
বেস হিসেবে আছে তেলের খালি সিলিন্ডার ড্রাম।যা বন্যার সময়ে ভাসিয়ে তুলবে প্রায় ১০ ফিট পর্যন্ত।
স্ট্রাকচারাল স্লপ শেকিং এবং ওয়াটার সার্জ রেসিলিয়েন্সের জন্য এংকর ব্যাবহার করা হয়েছে ।
সাড়ে চার ফিটের পাইলিং সহ কলাম এ্যাংকর গুলো ভাসমান এই স্ট্রাকচার স্থির রাখতে সাহায্য করবে।
মডিউল টি সাধারণ সময়ে অর্থাৎ দুর্যোগ পুর্ব মুহুর্তে দোকান ঘর এবং পরিবারের থাকার জায়গা হিসেবে ব্যাবহার করা
হবে।বন্যার সময়ে বা দুর্যোগ মুহুর্তে ১৬ স্কয়ার মিটারের খোলা যায়গায় গবাদিপশু সহ রান্নার ব্যাবস্থা করা হবে।
দক্ষিন পুর্ব পাশের মডিউল ০২ দুটো ফ্লোরের সমন্বয়ে গঠিত ।বন্যা পুর্ববর্তী সময়ে স্ট্রাকচার টির গ্রাউন্ড ফ্লোর ব্যাবহার
করা হবে রান্না ঘর এবং গোয়ালঘর হিসেবে।উপর তালায় খাদ্য শস্য মজুদের স্থান।মডিউলের প্লিন্থ হাইট তিনফিট।
এবং ট্রেডিশোনাল ব্রিক পাইলিং ব্যাবহার করে স্টাকচার কে স্থিতিস্থাপক রাখা হয়েছে। বন্যা বা দুর্যোগ মুহুর্তে স্ট্রাকচার
টি খাদ্য শস্য সেফ সেফ রাখবে যা বন্যা পরবর্তি সময়ে ফুড ক্রাইসিসে খাবার সরবরাহ করবে।
পয়ঃনিষ্কাশন এবং খাবার পানির জন্য রয়েছে একটি স্যানিটারি ল্যাক্ট্রিন,কলপাড় এবং পুকুর।
ল্যাক্ট্রিন এ ব্যাবহার করা হয়েছে ন্যাচারাল সেপটিক ট্যাংক যা বন্যার সময় পয়ঃবর্জ্য সুরক্ষিত রাখবে।
যাতে বর্জ্য প্রকৃতিতে অবমুক্ত হয়ে না যায় ।সেপটিক ট্যাংকের দুটো চেম্বার রাখা হয়ে ছে যাতে পয়ঃবর্জে্র সাথে
গৃহস্থালীর বর্জ্য জমা করে জৈবসার উৎপন্ন করা যায়।এবং সরাসরিতা সবজি র বাগান কিংবা এগ্রিকালচার ফিল্ডে
অবমুক্ত করার ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিটি স্ট্রাকচারে ব্যাবহার করা হয়েছে কর্নার ব্রেসিং,রুফ ট্রাস ,ক্রস ব্রেসিং,টাইট জয়েন্ট ফ্রেম। গোলপাতার চালা
কে চৌচালা হিসেবে ব্যাবহার করার পাশাপাশী যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে পিচ ৪০ ডিগ্রি রাখার।
যা ২৬৫ কি মি বেগের ঝড়ে টিকে থাকতে পারে।
ব্যাক্তি পর্যায়ে ব্যাবহার করা যেতে পারে এবিষয় টি মাথায় রেখে ডিজাইনটি সম্পন্ন করা হয়েছে।
ডিজাইনটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নযোগ্য এবং সুন্দরবনে এই ডিজাইনে বাড়ি তৈরি হলে উপকৃত হবে সুন্দরবনের
সাধারণ গরীব মানুষ - এই আশা ব্যক্ত করেছে প্রতিযোগী হাসিবুল আলাম হৃদয়।
হাবিপ্রবি স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক “এ স এ ম নাইম হোসাইন ” বিজয়ী শিক্ষার্থীকে
অভিনন্দন জানান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সফলতা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি হাবিপ্রবি স্থাপত্য
বিভাগের সকল
শিক্ষার্থীদের আহব্বান জানান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিক্ষার্থীর এমন সাফল্যে হাবিপ্রবি ও হাবিপ্রবি স্থাপত্য
পরিবার গর্বিত।
No comments:
Post a Comment