বাংলাদেশের জন্য বিশাল সুখবর আসছে আগামি কয়েক বছরের মাঝেই ।
বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠছে নতুন আরেক বাংলাদেশ ।
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে নতুন নতুন ভূখণ্ড। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠছে আরেক নতুন বাংলাদেশ। উজানি নদীর পানিবাহিত পলি জমে বিশেষ করে নোয়াখালী জেলার দক্ষিণে সাগরের বুকে জেগে উঠছে শতাধিক ছোট দ্বীপ। কোনোটি জোয়ারে ডুবে যায়, ভাটায় আবার ভেসে উঠে। কোনোটির কিছু অংশ জোয়ারেও ডোবে না। একটু পানির নিচে থাকা নতুন করে জেগে ওঠা এসব ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবি গুলা দেখলে স্পষ্ট ধারনা পাবেন কিভাবে নতুন ভূমি জেগে উঠছে |
ভারত, চীন ও মিয়ানমার নদীব্যবস্থাপনার
ছবি গুলা দেখলে স্পষ্ট ধারনা পাবেন কিভাবে নতুন ভূমি জেগে উঠছে |
সমুদ্রের অথৈ জলে প্রাকৃতিকভাবেই বিশাল বিশাল চর জেগেছে, গড়ে উঠেছে মাইলের পর মাইল ভূখণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে শুধুই ডোবা চর হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি চরভূমি ইতিমধ্যে স্থায়ী ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। সেসব স্থানে জনবসতিও গড়ে উঠেছে। একই ধরনের আরও প্রায় ২০টি নতুন ভূখণ্ড এখন স্থায়িত্ব পেতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না, বরং দিন দিনই বেড়ে চলছে এর আয়তন। একই রকম ডোবা চরের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ বা তারও অধিক হবে। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সেজিস) সাম্প্রতিক এক জরিপেও ৫৫ হাজার ৫৯৮ বর্গকিলোমিটারের
ছবি গুলা দেখলে স্পষ্ট ধারনা পাবেন কিভাবে নতুন ভূমি জেগে উঠছে |
বাংলাদেশের ভূখন্ডের আয়তন বাড়াতে সরকারের একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদী হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে। এ পলি উপকূলের কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে জমা হয়ে নদী ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উচ্চতা বাড়িয়ে চরের সৃষ্টি করে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় গত দুই দশকে ২ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি নতুন চরের সৃষ্টি হয়েছে। এসব চরের ভূমিকে স্থায়ী রূপ দিতে বনায়ন করা প্রয়োজন, যা জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ করবে। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এবং কৃষিপ্রধান দেশে জেগে ওঠা নতুন চর ভূমির স্থায়ীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে ম্যানগ্রোভ বনায়ন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ছবি গুলা দেখলে স্পষ্ট ধারনা পাবেন কিভাবে নতুন ভূমি জেগে উঠছে |
এদিকে হাতিয়াকে ঘিরে বিশাল বিশাল আয়তনের চরগুলো জেগে ওঠার বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে এবং নদী ও ভূ-বিশেষজ্ঞ দ্বারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাতিয়ার ভাঙনের মাত্রা কমানো গেলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা বাংলাদেশের চেয়েও বড় এক ভূখণ্ড সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নিঝুমদ্বীপ, নলেরচর, কেয়ারিংচর, জাহাজেরচরসহ বেশ কয়েকটি নতুন দ্বীপ যেন আরেক বাংলাদেশের জানান দিচ্ছে। এর মধ্যে নিঝুমদ্বীপে গড়ে উঠেছে ৫০ হাজার লোকের নতুন বসতি ও বনায়ন। এ ছাড়া দ্বীপ হাতিয়ার পশ্চিমে ঢালচর, মৌলভীরচর, তমরুদ্দিরচর, জাগলারচর, ইসলামচর, নঙ্গলিয়ারচর, সাহেব আলীরচর; দক্ষিণে কালামচর, রাস্তারচরসহ অন্তত ১৫টি দ্বীপ ১৫-২০ বছর আগ থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠেছে।
ছবি গুলা দেখলে স্পষ্ট ধারনা পাবেন কিভাবে নতুন ভূমি জেগে উঠছে |
কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর এভাবে অন্তত ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন চরের দেখা মিলছে। তবে নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ব্যাপক ভাঙনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এর আট বর্গ কিলোমিটার। ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই প্রতিবছর বাংলাদেশের মানচিত্রে যোগ হচ্ছে অন্তত ১২ বর্গ কিলোমিটার ভূমি। তবে পরিকল্পিত উপায়ে সরকারি উদ্যোগ নিলে এই বৃদ্ধির পরিমান বেড়ে ২০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়াতে পারে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এ্যাকচুয়ারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইডিপি) কনসাল্টেন্ট এস আর খান জানান, তাদের প্রকল্পের দেশী বিদেশী কনসাল্টেন্টদের গবেষণা ও জরিপ কার্যক্রমে দেখা গেছে ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী উপকুলে ৫৭৩ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদী থেকে জেগে ওঠে। আবার একই সময়ে জেগে ওঠা ভূমির ১৬২ বর্গকিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত টিকেছে ৪১১ বর্গকিলোমিটার। বছরে গড় বৃদ্ধি দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭৫ বর্গ কিলোমিটার।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং উরির চররের সঙ্গে নোয়াখালীর উপকুলীয় এলাকার চরগুলোকে ক্রসড্যামের মাধ্যমে যুক্ত করা গেলে ৯৪০ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি জাগবে বলে প্রকৌশলীরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর নোয়াখালী চরভূমি জেগে ওঠার হার দাঁড়াবে ২০ বর্গকিলোমিটারে।
নতুন চর স্থায়ীকরণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় ২৫০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বন অধিদপ্তর। নতুন চর জেগে ওঠার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিতকরণের
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অভিযোজন এবং নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে কার্বন মজুদ বৃদ্ধি করা হবে। আবাসস্থল এবং প্রজনন সুবিধার উন্নয়নের মাধ্যমে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।
২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের আওতায় বনায়ন শুরু হয়েছে। মূলত উপকূলীয় এলাকায় পানির মধ্যে বনায়ন শুরু হয়েছে। বনায়নের ফলে গ্রিন বেল্ট তৈরি হবে। ফলে একদিকে উপকূলীয় এলাকা নিরাপদ থাকবে অন্যদিকে ভূমি বাড়বে। যেমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও সুনামি বঙ্গোপসাগর দিয়ে মূলত বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। প্রবেশের সময় ঘূর্ণিঝড়ের একপাশে ছিল পশ্চিমবঙ্গ, আর সুন্দরবন ছিল তিন পাশে। সুন্দরবন অতিক্রম করতে ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘসময় লাগে ও গতি কমে আসে। ফলে পূর্ণ শক্তি নিয়ে বুলবুল বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত করতে পারেনি। একইভাবে গ্রিন বেল্টের মাধ্যমে উপকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। অন্যদিকে বনায়নের ফলে সেডিমেন্ট জমা হতে হতে এক সময় মাটি উঁচু হবে। এসব স্থানে জোয়ারের পানি উঠবে না এবং সবুজ ঘাস জন্ম নেবে। ফলে স্থায়ী ভূমিতে রূপ নেবে উপকূলে জেগে ওঠা চর।
বন অধিদপ্তরের অন্যতম টার্গেট ২০২১ সালের মধ্যেই ২৫০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বৃদ্ধি করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয়া। এক সময় সুবর্ণচর ছিল না, বনায়নের মাধ্যমেই এটা সৃষ্টি করা হয়েছে।
যেসব স্থানের নতুন চরে বনায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা, দশমিনা, দুমকি, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী সদর ও রাঙ্গাবালী উপজেলা। বরগুনা জেলার আমতলী, বামনা, বরগুনা সদর, বেতাগী, পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলা। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা। ভোলা জেলার ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা এবং তজুমুদ্দিন উপজেলা। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানিগঞ্জ, হাতিয়া, সেনবাগ, নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, সোনাইমুড়ি ও কবিরহাট উপজেলা। লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলগঞ্জ উপজেলা। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁইয়া, ফেনী সদর, পরশুরাম, ফুলগাজী ও সোনাগাজী উপজেলা। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, লোহাগড়া, পাহাড়তলী, পটিয়া, রাউজান, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম সদর উপজেলা। কক্সবাজার জেলার রামু, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং পেকুয়া উপজেলা।
জালবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গ একদিন তলিয়ে যাবে শুরু থেকেই এ তত্ত্বের যারা বিরোধিতা করে আসছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রফেসর রবের মতে, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মাধ্যমে প্রতি বছর ২.৪ বিলিয়ন টন (এক বিলিয়ন=১০০ কোটি) পলিমাটি বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ তিনটি প্রমত্তা নদীর বিশাল অংশ রয়েছে ভারত ও চীনে। ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গার দৈর্ঘ্য ১৫৬০ মাইল এবং ব্রহ্মপুত্রের দৈর্ঘ্য ১৮০০ মাইল। এ তিনটি নদী ছাড়াও ভারত ও চীনের অন্যান্য নদীব্যবস্থাপনার
© বিনয় আমীন বিনয়
No comments:
Post a Comment