হ্যাপি_স্থাপত্যইং||সজল দত্ত


রিক্সাওয়ালা চাচার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু অর্থের অভাবে সমস্যায় আছেন। এতক্ষণ রিক্সা চালাতে চালাতে সেই গল্পই পাড়লেন তিনি, রিক্সা থেকে নেমে ৩০ টাকা হাতে দিয়ে বললাম,
মামা, এখানে ভাড়া কিন্তু ২০ টাকাই, আপনার সমস্যা তাই দশ টাকা বেশি দিলাম। বাকিদের থেকে আবার ৩০ টাকা নিয়েন না।

আমি সবসময় এটা করি, ভাড়া বেশি দিলে রিক্সাওয়ালাকে এটা বলে দেই যে আপনার ন্যায্য ভাড়ার অতিরিক্ত আপনাকে দিসি। যাতে উনি ভুল না বুঝে আরেকজন এর থেকে বেশি না নেন। আমার জন্য হয়ত বাড়তি দশটাকা কোন ব্যাপার না, কিন্তু অন্য আরেকজন এর জন্য এটাই বারডেন হতে পারে।
এখন আমি যদি এভাবেই বাড়তি দেই এবং কিছু না বলি আরও চার- পাচ জন যদি সেইম কাজ করে তখন কি হবে? তখন রিকশাওয়ালারা এটাকেই তাদের ন্যায্য ভাড়া ধরে বসবে এবং এক পর্যায়ে যাত্রিদের সাথে বাধবে ক্যাচাল।

ব্যাপারটা খালি চোখে খুব-ই সামান্য একটা ব্যাপার, তাইনা? কিন্তু এই সামান্য ঘটনার সাথে আরও কোন অসামান্য ঘটনা কি রিলেট করতে পারতেছেন? সমাজের মোটামুটি অনেক জালিয়াতিই কিন্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এভাবেই শুরু হইছে। পরে গিয়া বৃহৎ আকার ধারন করছে।

যাইহোক, এই লেখার আসল উদ্দেশ্য হইতেছে স্থাপত্যের একটা ত্রুটিপূর্ণ সিস্টেম সম্পর্কে বলা। যেটা তিলে তিলে এভাবেই বড় একটা আকার ধারন করছে।

বিষয়টা হোল এই যে- আমরা গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর যখন সদ্য চাকুরীতে ঢুকি তখন আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন এর চেয়ে প্যাশন থাকে বেশি। এক্স-রে করলে হার্টের জায়গায় হয়ত দেখা যেতে পারে মাস্টার আর্কিটেক্ট লি করবুসিওর অথবা সম-সাময়িক কালের তাদাও আন্দো চুপটি করে বসে আছে। আর আমারাও তাই হন্যে হয়ে লিজেন্ড আর্কিটেক্ট এর লিজেন্ডারি ফার্ম খুঁজি।
হয়ত কেউ কেউ পেয়েও যাই। এবং দ্বিতীয় কোন ভাবনা মস্তিষ্কের ১-২ কিলোমিটার এর মধ্যেও আসেনা, ঢুকে পরি সেখানে। কারন- ঐ যে কাজ, শিখতে হবে, স্তাপত্যকে ভালবাসতে হবে, জানতে হবে, বুকে ধারন করে বুক ফুলাতে হবে ৩৪-৩৬ অব্দি, (মেয়েদের টা বিবেচনা সাপেক্ষে আরও বেশি হতে পারে)। ব্যাপারটা এরম আর কি...! সেখানে পারিশ্রমিক কত পাচ্ছি, পরিশ্রম কত টুকু দিচ্ছি, আমার প্রাপ্য কি আর পাচ্ছি কি এসব কিছুই ভাবছি না।

কারন আমারতো ভাবার দরকার নাই-
আমার বাবার পর্যাপ্ত পয়সা আছে, আমি আগামি ২-৩ বৎসর কিছু কামাই না করতে পারলেও সে বলবে না যে, গাড়ি নিয়া যে অফিসে যাও, তার তেলের টাকাটা অন্তত যোগার করো।

বাপ নিশ্চয়ই বলবে না যে বাসা ভাড়ার টাকা কই, কারন আমার নিজের-ই তো বাড়ি।

আম্মা নিশ্চয়ই বলবে না যে ঘরে আলু বিনা ভিন্ন স্বাদের তরকারি নাহি, বৎস, বাজার করিতে হইবেক, কারন আম্মার তো কাজের লোক-ই আছে ৫-৬ জন।

ছোট ভাই যে হাত খরচ চাবে না, এ আর বলার কি আছে, সে নিজেই তো ব্রিস্টলে গেছে পড়ালেখা করতে।

সো, আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট দিস ব্লাডি বেতন। এসব নিয়ে গরিবেরা বদারড হবে, আমি না। আমার শুধু কাজ শিখতে হবে। আর নাও যদি শিখতে পারি, ক্ষতি কি সবাইকে বলতে তো পারবো যে, আমি অমুক ফার্মে দীর্ঘ অমুক মাস/ বছর লিজেন্ডগিরি করেছি।

ফলাফল কি হচ্ছে?? আদতে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছেনা, পজেটিভ দিকটাই ভেবে নিলাম, হয়ত আপনি এই এক্সপেরিয়েঞ্চ দেখিয়ে অনেক ভালো ফার্মে পরে ঢুকতে পারলেন, লোকে আপনাকে দামও দিল।

কিন্তু ইন এ গ্রেটার কন্টেক্সট, একটা ব্যাড প্র্যাকটিস শুরু হোল। একটা ত্রুটিপূর্ণ ব্যাবস্থা চালু হোল- যেখানে বড় বড় ফার্মগুলা বিনা বেতনে/ নামে মাত্র বেতনে বিগিনার আর্কিটেক্ট দের পেয়ে গেল, এবং মধ্যম শ্রেনির ফার্মগুলোও তাদের পলিসি অনুসরন করল।

তারা ভুলে গেল যে স্থাপত্য-সমাজের সমাজপতি হিসেবে তাদের মুখে নয়, কাজেও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।

আর সমস্যাটা যা একটু হওয়ার  তাদের-ই হোল যারা আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল না। যাদের বাবা-মা ৫-৬ বছর খরচ বহন করার পর আরও ৬ মাস ১ বছর নিজেদের সন্তানকে বসিয়ে খাওয়াতে অপারগ।
আর হয়ত যারা ভাবেন স্থাপত্য একটি সৎ, নিষ্ঠাবান এবং উঁচু দরের পেশা, সমস্যা একটু তাদেরও হয়ত ঠেকে। বিবেকে ধাক্কা দেয় হালকা একটু।

আপনার আর কি??? আপনি ভাই ১০ হাজার টাকা বেতন নিয়ে, ২৫ হাজার টাকায় ড্রাইভার রেখে গাড়ি হাকিয়ে অফিসে যান।
#হ্যাপি_স্থাপত্য আপনার।

বিঃদ্রঃ অনেকেই ভাবতে পারেন, আরেহ আজব, এটাকে এত বড় করে দেখার কি আছে, এভাবেই তো কাজ শিখতে হয়। রিয়েলি??? এভাবেই?? সিস্টেমটা এর চেয়ে বেটার হতে পারত না? এই ধারা শত শত মাস ধরে চলে আসতেছে বলে এটাকেই পরম পূজনীয় সিস্টেম ধরে না নিয়ে, নীতিগতদিক দিয়ে ভেবে দেখেন তো... কোনটা ঠিক আর কোনটা আদর্শ? এটাকে “ভুল” নাহয় না বললাম।

বিঃবিঃদ্রঃ মহাকাশ_আর্কিটেক্ট দের ফ্যানরা গালি দিয়ে আমাকে মহাকাশে পাঠিয়ে দিয়েন না, প্লিজ।

বিঃবিঃবিঃদ্রঃ সবার প্রতি সম্মান রইল।

No comments

Powered by Blogger.