আসলে স্থাপত্য কি|| স্থাপত্য অবজার্ভার


Architecture নিয়ে কিছু অজানা প্রশ্ন অথবা আসলে স্থাপত্য কি? এ সব নিয়েই কিছু কথা। আর্কিটেকচার নিয়ে বললে আসলে শেষ হবার কথা নয়।

#Architecture_Review

আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য সমসাময়িক সময়ে বেশ সমাদৃত। আগে এ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ অনেক কম জানলেও, বর্তমানে দেশে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ,বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সম্মাননা, নিয়মিত সভা, কনফারেন্স, বিভিন্ন এক্সিবিশন ও কম্পিটিশনের এর মাধ্যমে মানুষ এই সাব্জেক্টটি নিয়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে। ক্রম্বর্ধমান চাহিদার জন্য ১৯৬১ সাথে কেবল একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের ইপুয়েটে (বর্তমান বুয়েট) স্থাপত্য শিক্ষার কার্যক্রম শুরু হলেও এখন সরকারি-বেসরকারি প্রায় ২৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিগ্রী দেওয়া হয়।
কিন্তু আর্কিটেকচারে ভর্তির আগে অনেকেই কোন রকম কোন ধারণা না নিয়ে ভর্তি হয়ে যায় এবং এ নিয়ে সেই শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারকেও অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। তাই অনেক কিছুই একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার।

আর্কিটেচারে ভর্তি ইচ্ছুক বা ভর্তি হওয়া স্টুডেন্ট দের মধ্যে বেশ কিছু প্রকার দেখা যায়, যেমন- সে আর্কিটেচার কি বা কেমন জানে, কেউ আমার কিছুই জানে না, কেউ মনে করে এখানে হয়ত খালি আঁকা-আঁকি অন্য প্যারা নাই তাই এটাই পড়বো, অংক/কেমিট্রি/ফিজিক্স ভাল লাগে না তাই পড়বো, এই সাবজেক্ট খুব সহজ তাই, আর্কির স্টুডেন্ট দেখছি চুল-টুল বড় রাখে সারাদিন গানবাজনা করে আমারো ভার্সিটি লাইফে একটু উরাধুরা কাজ করবো তাই, ফ্যামিলি প্রেশার (মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি, এই সাবজেক্ট সহজ, অনেক মেয়ে পড়ে আমার মেয়েকেও পড়াবো) আবার অনেকে এমন থাকে অমুক ভার্সিটিতে পড়বো কিন্তু আর্কিটেকচার ছাড়া অন্য সাবজেক্টে চান্স পাই নাই তাই এটাই সই… এরক আরো অনেক। তবে এদের মধ্যে আসলে বেশির ভাগই ভ্রান্ত ধারণা। তাই পড়তে আসার আগে কিছু জিনিস জানতে হবে।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত  


প্রথমত আর্কিটেকচার কি? এখানে কি করে? কি পড়ে? পড়া সহজ না কঠিন? পড়তে খরচ কেমন? এর ফিউচার কি? ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য হল এই সাব্জেক্ট এর নাম, আর স্থাপত্যে ড্রিগ্রী নেওয়া ব্যক্তিকে বলে আর্কিটেক্ট বা স্থপতি। আর একটু কাব্যের ভাষায় বললে আর্কিটেক্ট একজন স্বপ্নদ্রষ্টা যে শুধু স্বপ্ন দেখেই না স্বপ্ন বাস্তবও করে। এখন আর্কিটেকচার কি? বা আর্কিটেক্টদের কাজ কি? তারা কি বিল্ডিং বানায়? তাহলে সিভিল ইঞ্জিয়াররা কি করে? তাহলে কি সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা যা বানায় তা কি আর্কিটেকটরা আঁকিয়ে দেয়? তারমানে কি একজন ইঞ্জিনিয়াররা যা বানাবে তা তারা আঁকতে পারেনা জন্য আর্কিটেক্টদের হেল্প নেয়? এই বিষয়ে না জানা যে কেউ এমনকি উচ্চ শিক্ষিত কেউও হয়ত এমনি ভাবে। কিন্তু ভাবনা গুলো একদমই ভুল। আসলে আর্কিটেক্টরা বিল্ডিং আঁকায় না ডিজাইন করে। আসল কি জানো সব ইঞ্জিয়াররাই কিন্তু ডিজাইন করে একটা চিপ বা গিয়ার থেকে শুরু করে জাহাজ-রকেট পর্যন্ত সব কিছুই ডিজাইন করতে হয়। আর প্রত্যেকটা ডিজাইনই একটা মাল্টিডিসিপ্লিনারি একশন। মানে যে কোন কিছুই আসলে এক ধরণের ইঞ্জিনিয়ারা একা করতে পারে না।
যে কোন কিছু তৈরি করতে আসলে অনেক ধরণের ইঞ্জিনিয়ার দরকার হয়। যেমন একটা বিল্ডিং বানাতে একজন আর্কিটেক্ট এর পাশাপাশি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এমন অনেক ট্যাকনিক্যাল বিশেষজ্ঞের দরকার হয়, আর এই টিমে কিন্তু একজন আর্কিটেক্টই টিম লিডার থাকে। আর আর প্রত্যেকটি ডিজাইনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ড্রয়িং। ড্রয়িং হচ্ছে একটা ভাষা। ভাষা যেমন একে অন্যের সাথে কমিউনিকেশন করতে কাজে লাগে তেমন যে কোন ডিজাইন অন্যকে( ক্লাইন্ট, অন্য আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, কন্ট্রাকটর, শ্রমিক ইত্যাদি) বুঝানো ভাষা হচ্ছে ড্রয়িং। সো আর্কিটেক্ট দের কাজ আসলে ড্রইং করা না ডিজাইন করা সেখামে ড্রয়িং ও কাজে লাগে।

◆এখন ডিজাইন কি? ডিজাইন মানে নকশা। এই নকাশা কি কারুকাজ?
আর্কিটেক্টরা কি তাইলে বিল্ডিং এ কারুকাজ করে? না, ডিজাইন করা ব্যপারটা আসলে অনেক জটিল। যেটাই আসলে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সেখানো হয়। আর যদি একটা বিল্ডিং ডিজাইনের কথা বলি, তাহলে একটা বিল্ডিং তার ফাংশন( কি কাজে ব্যবহার হবে), তার অবস্থান (location), পারিপার্শিক অবস্থা (contex), আবহওয়া-পরিবেশ (climate-environment), নিয়ম-কানুন ( building codes), সংস্কৃতি (culture) এবং যে বানাবে/ব্যবহার করবে তার চাহিদা (client deman) ও তাকে বুঝে বিল্ডিং কেমন হতে পারে তার সামগ্রিক রূপরেখা( in terms of space, from and plan) তৈরী করাকেই সহজ কথায় ডিজাইন বলা যায়। এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিল্ডিং ডিজাইন সলুশনে অনেক ধরণের ইনোভেশনের দরকার হয়। এবং সেই ইনোভেশন কিভাবে সম্ভব? তা জানার জন্য পাঁচ বছরে অনেক কিছু পড়তে হবে এবং হাতে কলমে করতে হবে। আরেকটু বললে বলতে হয় একজন সিভিল ইঞ্জিনিইয়ার যেমন কোন বিল্ডিং এর স্ট্রাকচার ডিজাইন করে, ম্যাটেরিয়াল সিলেকশন-এস্টিমেশন, প্রোজেক্ট সুপারভিশন করে, তেমন আর্কিটেক্ট কিন্তু ওই বিল্ডিং/প্রজেক্টের এর বিল্ডিং ফর্ম এর পাশাপাশি স্পেসের এরেঞ্জমেন্ট, অরিয়েন্টেশন, স্পেসের কোয়ালিটি, ফাংশন, ফাংশনাল এরেঞ্জমেন্ট, সারকুলেশন ইত্যাদি বিভিন্ন ট্যাঞ্জিবল ও ইন্ট্যাঞ্জিবল বিষয় নিয়ে কাজ করে। সেই সাথে সেই প্রজেক্ট তৈরী করার জন্য বিবিধ প্রকার ড্রয়িং প্রস্তুতও করে। আবার মনে করিয়ে দেই এসব ড্রয়িং মানে শুধুই ছবি আঁকা না।

◆আর্কিটেক্ট কি শুধু বিল্ডিং ডিজাইন করে? বা কি কি বিল্ডিং ডিজাইন করে?
কুড়েঘর থেকে-বিলাস বহুল রেসিডেন্স, মেলার স্টল থেকে শুরু করে বিশাল করপোরেট বিল্ডিং একতলা স্কুল থেকে শুরু করে-একশ তলা হাইরাইজ, বাস স্টপ থেকে শুরু করে বিশাল এয়ারপোর্ট, ফুটপাত থেকে শুরু করে-ব্রিজ, একটা মনুমেন্ট থেকে পুরো একটা ভার্সিটি ক্যাম্পাস, হাউজিং থেকে শুরু করে পুরো একটা শহর ডিজাইন করতে পারে আর্কিটেক্টরা। শুধুতাই না তোমার পড়ার টেবিল থেকে শুরু করে তোমার টেবিল ল্যাম্পটা আর্কিটেক্ট ডিজাইন করতে পারে। একটু গুগোল করলেই বিখ্যাত আর্কিটেক্ট দের ডিজাইন করা দারুণ সব ফার্নিচার/প্রোডাক্ট পেয়ে যাবে। আর এছাড়াও একটা এলাকা কিভাবে ডেভেলপ করবে, একটা শহরে যানজট কিভাবে নিরসন হবে, শহর কিভাবে সাস্টেইনেবল হবে ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার আরবান প্রবলেম নিয়েও কিন্তু আর্কিটেক্টরা কাজ করে। আর প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে স্থপতিদের কাজের ক্ষেত্রও এখন অনেক ডাইভাসিফাইড।

◆কি পড়ানো হয় আর্কিটেক্টচারে?
আর্কিটেকচারে পড়াশুনা অনেকটা প্রবলেম সল্ভিং টাইপের। প্রবলেম সল্ভিং এর মাধ্যমে শিখবে কিভাবে ডিজাইন করা হয়। একজন আরকিটেকচারের স্টুডেন্ট শিখানো হয় কিভাবে একটা সমস্যা ফাইন্ড আউট করতে হয়। প্রজেক্ট এর স্ট্রেন্থ, উইকনেস, অপরচুনিটি এবং থ্রেটস বিবেচনা করে প্রবলেমের কিভাবে সমষ্টিগত সমাধান দিতে হয়। যদিও প্রথম বছর তোমার পড়াশুনা ডিজাইনের ধারে কাছে দিয়েও যাবে না, তাতে ঘাবড়ানো বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আসলেই এই সময়ে তোর মাইন্ডকে টেইন্ড করা হবে ডিজাইনের ঢোকার উপযুক্ত করার জন্য। এজন্য অন্যান্য যেকোন সাব্জেক্টের থেকে এখানে সেশনাল/প্রেক্টিক্যাল কোর্স (ডিজাইন স্টুডিও ও অন্যান্য) অনেক বেশি। সর্বোমোট ১০ টি ডিজাইন স্টুডিও আর এর একটা আনুসাঙ্গিক জিনিস পাবে, জুরি (Jury, kind of presentation of your design to your teachers or other externals)। কোন ডিজাইনই এমনি এমনি হয় না, এর জন্য তোমাকে প্রচুর পড়তে আর জানতে হবে। এর জন্য কারিকুলামে আছে অনেক গুলো থিওরি কোর্স। অংক-ফিজিক্স থেকে শুরু করে স্ট্রাকচার, ক্লাইমেট, হিস্ট্রি, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল, বিল্ডিং টেকনলজি, ল্যান্ডস্কেপ, আরবান প্লানিং এবং ডিজাইন, ম্যাকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, সোসিওলজি, ফিলোসফি, ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং, প্রফেশনাল এথিকস ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও আরো ছোট ছোট কিন্তু খুবই দরকারি কিছু ক্ষেত্রে বেশ মজার কিছু সেশনাল যেমন- ওয়ার্কিং ড্রয়িং, কাম্পিউটার গ্রাফিক্স, প্রোডাক্ট ডিজাইন, স্কাল্পচার, ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো জানতে চাইলে বিভিন্ন ভার্সিটির প্রোসপেক্টাস গুলো দেখতে পারে। সব মিলিয়ে তোমাকে পাঁচবছরে ১৮০-১৯০ ক্রেডিটের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

◆আর্কিটেকচার কি সহজ না কঠিন?
পড়াশুনার বহর দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই এই সাবজেক্ট একেবারেই সহজ কোন সাব্জেক্ট না বরং বিশ্বের কঠিনতম সাব্জেক্ট গুলোর মধ্যে একটি। কঠিন বলে আসলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সব সাব্জেক্টিই তার মত করে কঠিন। তবে হ্যাঁ অনেক বেশি সময় দিতে হবে এখানে। অনেক পরিশ্রম, অনেক রাত জাগা, টিচার দের অনেক ঝাড়ি শোনা, ডিজাইন নিয়ে হতাশার মাঝেও কিন্তু স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা জীবনটাকে উপভোগ করতে জানে। কঠিন জিনিস কে কিভাবে হ্যান্ডেল করবে এটা আসলে নির্ভর করে তোমার উপর, আর এটা, এই জগতে আসলেই তো বুঝে যাবে কিভাবে সবাই শুধু সারভাইবই করে না বরং ভালও করে। তবে এখানে টিকতে হলে তোমাকে কঠোর পরিশ্রমী, অসীম ইচ্ছা, ভাল করার মানসিকতা, অন্যের সাথে কাজ করার ক্ষমতা (অনেক গুলো গ্রুপ প্রজেক্ট করতে হয় এই পাঁচপবছরে) এবং ভাল কমুনিকেশন স্কিল, কম্পিউটারে দক্ষতা থাকতে হবে, মোট কথা এখনে পড়তে আসলে একে ভালবাসতে হবে এবং কাজের নেশা তৈরি করতে হবে। পরিশ্রম করার মানসিকতা না থাকলে এখানে না আসায় বরং ভাল। আর একটু অন্যরকম শোনালেও এটা সত্য যে এই পাঁচ বছরে তোমার অসুস্থ হওয়া চলবে না, ফিট থাকতে হবে। আফটার অল এটা একটা ইনটেনসিভ ট্রেনিং।

◆এখন আসি খরচ কেমন এখানে পড়তে?
আসলে সত্যি বলতে এটা একটা খরুচে সাব্জেক্ট। প্রথমেই বিভিন্ন বই ছাড়ারও তোমাকে ভাল রকম টাকা খরচ করতে হবে বিভিন্ন ইকুইপ্টমেন্ট কেনার জন্য। তছাড়া একটা ভাল কনফিগারেশনের কম্পিউটারও অবশ্যক, কিছু ক্ষেত্রে একটা DSLR ও লাগতে পারে তোমার কাজের নিয়মিত ডকুমেন্টেশন করার জন্য।(তবে এখন মোবাইল টেকনোলজি অনেকদূর এগিয়েছে।না থাকলেও চলবে। আর একটা ডিজাইনে যেহেতু ট্রায়াল এন্ড এরোর এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাই মডেল, প্রিন্ট এগুলো তে বেশ ভাল একটা খরচ হয় প্রতি সেমিস্টারে। আর বিভিন্ন প্র্যেক্টিকাল প্রজেক্ট এর জন্য সাইট ভিজিট, সাইট সারভেয়িং এর খরচ তো আছেই। তবে এই খরচ তুমি টিউশনি, বিভিন্ন আউট সোর্সিং, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোফেশনাল মডেল মেকিং করেই উঠাতে পারবে, আসলে এটাই সবাই করে সাধারাণত। তাই ওয়েল টু ডু ফ্যামিলির ছেলে-মেয়ে ছাড়া এখানে সারভাইব করা টাফ হলেও ইমপ্সিবল না একদমই। বিশেষ করে এখানে এমনিতেই পাঁচ বছর পড়াশুনা করতে হয় তার উপর পাশ করার পরই তুমি খুব ভাল বেতনের চাকরি পাবে না, বিশেষ করে প্রথম দুই বছর তোমার প্রভিশনাল পিরিয়ড এই সময়টা তুমি প্র্যাক্টিক্যালি শিখবে কিভাবে একটা বিল্ডিং বানাতে হয়। এই সময়টা তোমার জন্য ফ্যামিলিটে সাপোর্ট করাটাও একটু কঠিনই হবে। সুতরাং এখানে পড়তে আসলে এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। আর সারা বিশ্ব জুড়েই আর্কিটেক্টরা কিছুটা আন্ডার পেইড। তবে সময় বদলাচ্ছে, আর তুমি যদি যোগ্য/দক্ষ/কাবিল হও তাহলে মনে হয় না টাকা-পয়সার চিন্তা করা লাগবে আর হ্যা এটা কিন্তু অবশ্যই কিছুটা সময় সাপেক্ষ অন্তত ৫+২=৭ বছর তো বটেই।

◆ফিউচার কি? বা ক্যারিয়ার কেমনঃ
ফিউচার আসলে তোমার নিজের চেষ্টা আর যোগত্যর উপর নির্ভর করছে। আর্কিটেকচার একটা বুমিং সেক্টর আর অনেক অনেক অপরচুনিটিস, এখন কথা হচ্ছে তুমি সেগুলো কে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নিজের ফিউচার গড়ছো? শুধু আর্কিটেক্ট নয় ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইনয়ার, আরবান ডিজাইনার, প্রজেক্ট ম্যানেজার, রিসার্সচার, শিক্ষকতা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে এই সাব্জেক্ট পড়ে আর যদি চাকরির বাজার জানতে চাও তাহলে দেশে এখন প্রচুর দেশী-বিদেশী আর্কিটেকচারাল ফার্ম আছে শুরুটা হতে পারে সেখান থেকে যদিও প্রাথমিক অবস্থাই সেখানে কিন্তু তুমি আন্ডারপেইড থাকবে ( সারা বিশ্বে একই অবস্থা)। আর যদি ভাল মানের স্যালারি চাও তাহলেও অপশন আছে – বিভিন্ন ডেভলপারস, সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিতেও এখন আর্কিটেক্ট হায়ার করে, এছাড়া স্থাপত্য অধিদপ্তর, রাজউক, সিটিকর্পোরেশনস, বিভিন্ন ব্যাংক, আর্মি-পুলিশে, বিভিন্ন এনজিও তেও আর্কিটেক্ট দের পোস্ট আছে এবং সেখানে তুমি ভালই বেতন পাবে। আর তুমি যদি একাডেমিশিয়ান হিসাবে তোমার ক্যারিয়ার গড়তে চাও তাহলে সেই অপশনও আছে, আগেই বলা হয়েছে দেশে এখন প্রায় ২৯ টি আর্কিটেকচার স্কুল আছে। এছাড়া দেশের বাইরে বড় বড় আর্কিটেকচারাল, কন্সট্রাকশন কম্পানি ছাড়াও হাজার রকম জব আছে আর্কিটেক্ট দের জন্য। উপযুক্ত স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে একজন আর্কিটেক্ট অনান্য ইন্ডাস্ট্রিতেও যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফ্লিম মেকিং, ফটোগ্রাফি, সেট ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডিজাইন, ডিল্ডিং সারভেইং, পলিসি মেকিং, কনজারভেশন ইত্যাদিতেও ক্যারিয়ার গড়তে পারে।
গতাগুগতিক চাকরি ছাড়াও কিছুটা হাতপাকানোর পর নিজেও আর্কিটেকচার, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ল্যান্ডস্কেপিং ইত্যাদি বিষয়ে সার্ভিস দেওয়ার জন্য একটা ফার্ম খুলতে পারো। বাজারে নিজের কাজের এফিসিন্সির প্রমান দিতে পারলে তুমি শুধু ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেই মাসে লাখে কামাতে পারবে :D। এছাড়াও বিভিন্ন স্টার্টাপ আইডিয়া নিয়েও ফিন্ডে নামতে পারো। আর আউট সোর্সিও করতে পারো স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই, সেখানেও আছে হাজার রকম অপশন।

◆আর্কিটেকচারে হায়ার এডুকেশনঃ
এটা যদিও পুরোই আলাদা একটা ব্যাপার এবং আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে তাও সামান্য করে বলতে গেলে অন্য সাব্জেক্টের মত এই সাবজেক্টেও হায়ার এডুকেশনের প্রচুর অপশন আছে। দেশে এই অপশন কম থাকলেও বিদেশে এই অপশন প্রচুর। Architectural Design, Environment and Design, Urban Planning and Design, Art and History, Landscape, Climate and Design, Computational Architecture, Human Settlement and Housing, Conservation, Project Management, Building technology ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে হায়ার স্টাডিজ করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ফান্ডিং এবং স্কলারশিপও পাওয়া যায়। একাডেমিশিয়ান হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে বা কোন সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উচ্চ দক্ষতা অর্জনের জন্য বা বিদেশে লাইসেন্সড আর্কিটেক্ট হোয়ার জন্য হায়ার এডুকেশন কিছুটা অত্যাবশ্যকই বটে।এছাড়া চাইলে দেশের বাইরের ফার্ম এ ইন্টার্ন আর কাজ করার সুযোগ তো থাকছেই যদি বাইরে সেটেল হবার ইচ্ছা থাকে।

◆স্থাপত্যের মজাঃ
আর্কিটেকচার একটা নতুন একটা নতুন ফ্যামিলি দিবে তোমাকে, একটা নতুন জীবন। আর্কিটেকচার একটা নতুন চিন্তাধারা এনে দিবে। ইন্ট্রোভার্ট হলেও এখানে এসে এক ধাক্কায় এক্সট্রভার্ট হয়ে যাবে। সবাই কে নিয়ে ভাবতে শিখবে। বাস্তব জ্ঞানের পাল্লায় অনেককে পিছে ফেলে দিতে পারো,কারণ তোমার ডিপার্টমেন্টের পরিবেশ তোমাকে বাধ্য করবে হাজারটা জিনিস নিয়ে জানতে। ছোট স্ক্রুর ডিটেইল থেকে শুরু করে একটা গোষ্ঠির আর্থনৈতিক বা সামাজিক মুক্তি কিভাবে হবে সেই পর্যন্ত। আর হ্যাঁ তোমার তোমার আগামী পাঁচটা বছর অনেক হাসি-কান্নায়। আর্কির ছেলে-মেয়ের দের একটা দূর্নাম আছে এরা খুব ট্যুর দিয়ে বেড়ায়। হু একদম সত্যি। একদম ঘরকুনো ছেলে/মেয়েটাও এই পাঁচ বছরে কিভাবে কিভাবে জানি দেশ-বিদেশ চষে বেড়ায় নতুন কিছু দেখার জন্য, শেখার জন্য, জানার জন্য, নতুন কিছুর সাথে মেশার জন্য।
এখানে অনেক কষ্ট, হতাশা, অনেক পরিশ্রম সত্যি। কিছু সৃষ্টি করার মজাটা একদম অন্যরকম। স্থাপত্যর পড়া সত্যিই একটা ব্লেসিং।

কিছু সত্যি মিথ্যাঃ
◆আর্কিটেকচারে ভাল করতে গেলে কি খুব ভাল আঁকতে পারতে হয়? বা আমি খুব ভাল আঁকতে পারি বলে কি আমি আর্কিটেকচারে খুব ভাল করবো? – না।
◆আর্কিটেকচারে পড়লে কি আসামাজিক হয়ে যায়? – কিছু ক্ষেত্রে হ্যাঁ। অনেক কাজের প্রেসারে তোমার কাছের বন্ধু যারা অন্য সাব্জেক্টে পড়ে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতে পার এবং ফ্যামিলিকে দেওয়ার মত সময় করে যাবে।
◆আর্কিটেকচারে কি অনেক রাত জেগে কাজ করতে হয়? – সত্যি বলতে এত কাজ থাকে যে অনেক সময়ই রাত জেগে কাজ করতে হয়। তবে টাইম ঠিক মত ম্যানেজ করতে পারলে হয়ত রাত জাগা নাও লাগতে পারে।
◆আর্কিটেকচারে কি অনেক খরচ? – হ্যাঁ
◆আর্কিটেকচার পড়লে কি মানুষ পাগল হয়ে যায়? – হা হা… একদমই না।
◆আর্কিটেকচারের স্টুডেন্টরা কি খালি গান-বাজনা করে? – না। তারা জন্য স্টুডেন্টদের মতই কাজে শেষে সময় পেলে বিভিন্ন এক্সট্রাকারিকুরাল এক্টিভিটিজ করে।
◆আর্কিটেকচার কি চারুকলা টাইপের? – উহু না। এটা একদমই একটা টেকনিক্যাল সাব্জেক্ট
◆আর্কিটেকচার আর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কি এক? – না
◆বিসিএস এ কি আর্কিটেক্ট দের পোস্ট আছে? – না, আপাতত নেই।

Written by
গৌরব কুণ্ডু
প্রাক্তন শিক্ষার্থী,
সমান্তরাল ’১১,বুয়েট।
লেকচারার, স্থাপত্য বিভাগ
MIST (Military Institute of Science and Technology)

No comments

Powered by Blogger.