Thursday, May 23, 2024

ইন্টেরিওর ডিজাইনের নামে কাঠ আর বোর্ডের আলগা লেয়ার বাড়ানো ঢাকায় আগুনের ঝুঁকি বাড়ার||



ন্টেরিওর ডিজাইনের নামে কাঠ আর বোর্ডের আলগা লেয়ার বাড়ানো ঢাকায় আগুনের ঝুঁকি বাড়ার ব্যাপারটাকে প্রায় জাতীয় বিপর্যয়ের পর্যায়ে যে নিয়ে গেছে এটা এখন আস্তে আস্তে সবার সামনে আসছে। ঢাকায় যেহেতু ছাদের বাইরে খুব একটা যাওয়ার মত জায়গা নাই, তাই ঘরে, রেস্টুরেন্টে কিংবা ভবনের ছাদেও অনেকে একটু বসার মত, দুই দন্ড কাটানোর মত জায়গা খুজতে চান।

নির্মান শিল্পের তুলনায় ইন্টেরিওর ব্যবসার টার্নওভার "অনেক লাভজনক" নয়। কিন্তু লাভের অংকটা একদম খারাপ নয় কারণ ভবন নির্মানের মত এটা লম্বা সময়ের বিনিয়োগ নয়। অল্প সময়ে লাভ উঠিয়ে আনা যায় বলে যার হাতেই একটু টাকা আছে আর গুগলের বাইরে pinterest এর খবর যিনিই জানেন তিনিই ধরে নিচ্ছেন এটা করা কোন ব্যাপার না। ছবি দেখাবেন ছবির মত বানায় দিবে। অনেকের কাছে আবার এটাই "আর্কিট্যাকচার"

আমি দুইটা গল্প বলি। প্রথম গল্পের নায়কের নাম ধরা যাক সুলতান (ছদ্মনাম)। একটা দেশী কর্পোরেটের হয়ে যখন কাজ করি সেখানে এসে যোগ দিলেন retail interior expert হিসাবে। একটা ভুইফোড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেরিওর ডিজাইনের ডিগ্রী আছে, আছে সেখান থেকে মাস্টার্স ও। সুলতান মশায় বয়সে বড় বলে নানা টাইপের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারীদের খুব একটা গুনেন না। আমরা কয়জন তরুণ আর্কিটেক্ট মিলে টিম। তাকে শুরুতে বেশি ঘাটাতে চাইলাম না। কিন্তু দুইমাস যেতেই বুঝে গেলাম সুলতান চাঁদ ক্যাড খুলতে পারলেও ড্রয়িং করতে পারেন না কিছুই, থ্রিডি সফটওয়ার প্যান করতে দিলে তার হাত কাঁপে এবং রেন্ডারিং বানান করতে দিলে কলম পেন্সিল ভেঙ্গে তিনি একাকার করবেন। কিন্তু তিনি যেটা করেন, অন্যের করা ক্যাড ড্রয়িং সংগ্রহ করেন। কোম্পানির একটা দামী ল্যাপটপ বাগিয়েছেন আইটি থেকে। সেটায় অন্যের করা সেই ড্রয়িং খুলে ক্লায়েন্টের সামনে জুম ইন জুম আউট করে কাজ বা চাকরী বাগাতে পারেন। এ অবস্থায় আস্তে আস্তে তাকে এসব কাজের দায় থেকে মুক্তি দিয়ে মিস্ত্রী ম্যানেজমেন্ট বা মালামাল কেনার মত মাঠের কাজে লাগানো যায় কী না সেদিকে মন দিতে হল বাকিদের। কিন্তু আরো তিনমাস যেতেই দেখা গেল তিনি নিজের মিস্ত্রী দিয়ে কাজ, নিজের পছন্দের দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করে কোম্পানির ১৮-২০ লাখ টাকা গাপ করে বসে আছেন। সুলতান চাঁদকে নিয়ে কোম্পানি কি করবে ভেবে বের করতে অত্যন্ত ঝানু ম্যানেজমেন্টকেও বেগ পেতে হয়েছে এরপর। সুলতান মিয়া যে তার বিল্ড করা কাঠের বাক্সের ভেতর মানুষ নিরাপদ থাকবে কী না সেটা জানতেন না, বিল্ডিং এর কোড নিয়ে কোন ধারণা রাখতেন না সেটা বলাই বাহুল্য।
দ্বিতীয় গল্পটা এই কর্পোরেটে জয়েন করার আগে "ইন্টেরিওর ফার্ম" নামে ব্যাবসা করা এক টিমে কাজ করা বন্ধুর। ধরি কোম্পানির নাম "হায়হায় ইন্টেরিওল"। এদের টেকনিকাল সমস্যা থাকার  কথা না। কারণ এদের এত টাকা যে দুই চারটা আমার বা আমার বন্ধুর মত "আর্কিট্যাক্ট" তারা পকেটে পুরে রাখতে পারে। এরা আবার ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের ইন্সটিটিউটের সদস্য। (যেটার কোন গেজেটেড স্বীকৃতি নাই অবশ্যই, তবে তারা "লাইসেন্স" দিয়ে যাচ্ছেন) এই ফার্মে করে রাখা ডিজাইন আছে কিছু।




ক্লায়েন্টের নিয়ে আসা পিন্টারেস্টের ছবি মিলিয়ে সেই একই "ডিজাইন" নানাভাবে তোলাই তাদের কাজ। এরা একবার এগুলো করতে করতে "আউটডোর" রেস্তোরার কাজ পায় একটা যেখানে ক্লায়েন্ট কন্টেইনার দিয়ে কিচেন সহ রেস্টুরেন্ট ডিজাইন করে দিতে বলেন। বিবিএ পাস করা মালিক সেখানেও তার  pinterest ঝাড়তে গিয়ে বর্ষার কবলে পড়েন এবং তার কন্টেইনার লেগোসেট ধ্বসে পড়ে Opening এর আগেই। পড়বেনা কেন? সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, প্ল্যানার এগুলো যে দরকারই পড়েনাই।
অনেকেই বলছেন "কাগজের আওতায়" আনলেই এগুলো বন্ধ হবে। হবেনা। অবৈধ "ইন্সটিটিউট", নন এক্রিডেটেড "ডিগ্রী", এবং আমাদের ক্লায়েন্টবেজের প্রায় অশিক্ষিতের মত নিজেদের সেফটি সিকিউরিটী ভুলে যাকে তাকে কাজ দিয়ে ফেলার যে দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে এটা ভাংতে গেলে কারো মাথার ওপর ইন্টেরিওর ডিজাইন ভেঙ্গে পড়তে হবে। তারপর আইনের দাবী উঠবে। একদিন আইন হবে এবং সেই আইনের ফাক গলে আবার এগুলো চলতেই থাকবে।
কারণ, সুলতান চাঁদ এবং  হায়হায় ইন্টেরিওল এখনো সদর্পে এদেশের মার্কেটে কাজ করে যাচ্ছে।

নিচে দু'টি ছবি যোগ করে দিই। 
ছবি ১ঃ দাহ্য বস্তুতে পরিপূর্ণ ঢাকার রাজকীয় কোন রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিওর।
 ছবি ২ঃ একই জায়গায় ধরে যাওয়া প্রাণসংহারী আগুন।

©Asif Hasan Zeshan

No comments:

Post a Comment