জিলাপি ও জমা


যখন স্টুডেন্ট ছিলাম জমার আগে মার মার কাট কাট অবস্থা হোতো , আগামীকাল আমার একটা জমা আছে । ট্রেসিং পেপার-এ প্রিন্ট যাবে । ক’দিন ধরে layout ঠিক করছি , আপনারা হয়তো জানবেন স্থাপত্যকলায় নকশা বদলে যায় ক্ষণে ক্ষণে । শেষ মুহূর্তে মনে হয় এলিভেশনটা এমন না হয়ে এমন হলেও মন্দ হোতোনা । যদিও হাসপাতালের ক্ষেত্রে ফাংশন এতো এটে বসে যে রুমকে এদিক সেদিক করার সুযোগ হয় খুব কম তবুও আর্কিটেক্ট বলে কথা । পাঁচ বছরের দোষ (!) যাবে কোথায় ? আজকেও শেষের বেলায় কাজ শেষ করছি । 


নীলক্ষেতের এই প্রিন্টের দোকানের সাথে আমার আদ্দিকালের যোগ , সেই ২০০৯ থেকে প্রিন্ট করি । আজকে al noor এ বসে যখন কাজ করছিলাম কাদের ভাই বলছিলেন , আপু আপনি এখনো দোকানে বসে কাজ করেন ! তো , কাজ করতে করতে পেটে ছুচোর ডন । বহুবছর আগে যখন জমা চলতো , যখন ট্রেসিং এর ২০”*৩০” প্রিন্ট দিতে গিয়ে পয়সায় টান পড়তো , যখন মামা আরেকটু কমান প্লিজ বলে , AM Graphics এ মুলামুলি করতাম তখন প্রিন্ট ছেড়ে নীলক্ষেতের এই রসভরা চিনির জিলাপি খেয়ে আসতাম । এতে দুটো সুবিধা হোতো , চিনি খেয়ে বহুক্ষণ না খেয়ে থাকার যে মাথা বনবনানি , ব্যথা সব কমে যেতো । এ মচমচে একটা জিলাপি খেয়েই পেট ভরতো , আদতে এতো মিষ্টি তো খেতে পারতাম না । সেই একখানা জিলাপি খেয়ে প্রিন্ট নিয়ে জুরি করতে যেতাম । আমি এই জিলাপির নাম দিয়েছিলাম এনার্জি জিলাপি । সেই একখানা জিলাপি তখন ছিলো সারাদিনের রসদ , ওই জিলাপি খেয়ে জুরি করলে যতোই বাঁশ খাই না ক্যানো ফেল করিনি । 


আজ সারাদিন অফিস করে পেট চুই চুই , কী খাই . কী খাই ! পরে মনে হোলো ক্যানো সেই জিলাপি নয় ? সেই আগুনগরম  জিলাপি খাচ্ছি , গরম গরম । রসে মুখ ভরে আছে , দু-তিন ফোঁটা রস কিবোর্ডেও পড়েছে অসতর্কতায় , তা-তে কী ! খেয়ে নিলাম , বহুদিন পর রেশমি জিলাপি বাদে মোটা প্যাঁচের জিলাপি , কাজ শেষ হবে হবে , ডামি প্রিন্ট ছাড়া হয়েছে , আমার মাথার চক্করও কিছুটা কমেছে , আশা করছি জমাও ভালোভাবে হয়ে যাবে , এনার্জি জিলাপি খেয়েছি , ভালো না হয়ে হয় ? 

অনেকেই বলবেন ক্যানো নিজে প্রিন্ট করছি ? আমি আসলে কাজের ব্যাপারে বেশ কেমন যেনো , নিজে না করে শান্তি পাইনা , তাই অফিস শেষ করে নিজেই কাজটা শেষ করে নেয়া । 


যে স্থাপত্য পাঁচ বছরে রক্তে মিশেছে , তাকে কি করে এতো সহজে ছাড়ি ?

©Pritha Sharadi ফেসবুক পেইজ থেকে সংগ্রহীত।

https://www.facebook.com/sharadi1410/



No comments

Powered by Blogger.